ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা হচ্ছে
- আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৪ ১২:৫২:৫২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৪ ১২:৫২:৫২ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এ পর্যন্ত চাকরি পেয়েছেন ২০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানিয়েছেন। ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁজে বের করতে এ তালিকা করছে সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের ৬২টি সংস্থার সচিব/সিনিয়র সচিবদের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চিঠি পাঠানো হয়েছে পিএসসিকেও। চিঠিতে মন্ত্রণালয়গুলোকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ করা জনবলের তথ্য পাঠাতে একটি ছক করে দেওয়া হয়েছে। ছক অনুযায়ী প্রার্থীর নাম, নিয়োগপ্রাপ্ত পদ ও শ্রেণি; বাবার নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, যার মুক্তিযোদ্ধা সনদ/গেজেটের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন (পিতা, মাতা, পিতামহ, মাতামহ) তার নাম ও ঠিকানা; মুক্তিযোদ্ধার নাম, পিতা/মাতা/পিতামহ/মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট নম্বর এবং নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার তারিখ জানাতে হবে বলে জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী জানান, দু-তিনটি মন্ত্রণালয় ছাড়া অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে তালিকা চাওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা না হলেও যে তালিকা এসেছে, তাতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর ও বিভাগগুলোয় ২০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। তিনি বলেন, বিগত দুই দশকে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ভুয়া সনদে চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল বিস্তর। এই দাবির প্রতি সম্মান জানিয়েই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রস্তুত করছে। এই তালিকায় কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা প্রজন্ম আবার কারা ভুয়া, এটি খতিয়ে দেখবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। যদিও এখন পর্যন্ত জামুকা পুনর্গঠন করা হয়নি। শিগগিরই জামুকা কমিটি হবে। জামুকার রিপোর্ট অনুযায়ী সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ জনপ্রশাসনে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, জামুকা না থাকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা স্থানীয় পর্যায়ে তদন্ত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে থাকা বিভিন্ন তালিকার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম দায়িত্ব গ্রহণের পরই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় গ্রেড অনুযায়ী কতজন সরকারি চাকরি পেয়েছেন সেই তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয়েছে। ওই সনদ দিয়ে তারা চাকরি নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা সনদ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এত দিন কারা মুক্তিযোদ্ধা, সেটা জামুকা নির্ধারণ করে দিত। মন্ত্রণালয় শুধু তাদের নির্ধারিত হওয়া বিষয়টি বাস্তবায়নে যেত। এটার আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা রিভিউ হবে কি না, জানতে চাইলে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা জানিয়ে ছিলেন, অবশ্যই হবে, যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মানটা ফিরে পান। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের জাতীয় জীবনে অনন্য ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধা, তারা ওটাই ফিরে পেতে চান। এটাই তাদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ভুয়া সনদ নেওয়ার প্রমাণ পেলেই সরাসরি দুর্নীতি মামলা করা উচিত। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ হলেই প্রতারণার মামলায় অভিযোগ গঠন করা যায়। কারণ জনগণের টাকায় বেতনভুক্ত হয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধ। অতীতে এমন ঘটনায় বিচার হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার হয়নি তার মানে বিচার হবে না এমন হওয়া উচিত না। বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ